লকডাউনের শুরু থেকেই বাসায় গৃহবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন বর্ষিয়ান রাজনীতিক ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। মানবজমিনকে বললেন, জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত এতদিন ঘরে আটকা অবস্থায় কাটাইনি। একমাত্র ব্যতিক্রম, যখন কারাগারে বন্দি ছিলাম। লকডাউনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুরো সময়টাতে এভাবেই কাটছে। প্রায় দুই মাসের বেশি সময় বাইরে যেতে পারছি না।
আমি রাজনীতি করা মানুষ। সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা, মানুষের পাশে ছুটে যাওয়া এটাই আমার কাজ। এত বড় ধরনের বিপদের সময়ও মানুষের পাশে ছুটে যেতে পারছি না এটা ভেবে খারাপ লাগছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আমাদেরকে এমন এক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দু মাসের বেশি বন্দি, কীভাবে কাটছে সময়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
৭ নং বেইলী রোডের বাসাতেই বন্দিদশায় কাল কাটাচ্ছি। তিন নাতি নাতনির সঙ্গে খুনসুটি করে সময় কাটছে। লনে কখনও কখনও হাঁটাহাঁটি করি, এই যা। এর বাইরে বাসায় অনেক বই জমে আছে তা থেকে কিছু কিছু বের করে পড়ছি। আমার জীবনীর একটি অংশ বাকি ছিল। যা এখন টুকটাক লিখে শেষ করার চেষ্টা করছি। এর প্রথম অংশ আগেই প্রকাশ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় অংশের কাজ করছি। এর সময়কাল হবে ১৯৭৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত।
দলের কাজ কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নে ড. কামাল বলেন,
করোনা ভাইরাসে তো বাইরে বের হওয়ার অবস্থা নেই। বাইরে কাজ করা যাদের অভ্যাস তাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই সময়টি খুব কষ্টের। আদালত পাড়াও বন্ধ, অফিসও বন্ধ। সময় পেলেই বাসা থেকে টেলিফোনে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। পরামর্শ দিচ্ছি। পরিস্থিতি এমন না হলে এ সময়টায় মানুষের কাছে ছুটে যেতাম। কিন্তু করোনা ভাইরাস এমন এক পরিস্থিতির তৈরি করেছে যে বাইরে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। দলের নেতাকর্মীরা সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের জন্য কাজ করছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে
তিনি বলেন,
করোনা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। লকডাউন অনেকটাই শিথিল বলে করোনা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে উদ্বেগের কারণ আরও বেশি। এটা বন্ধ হচ্ছে তো ওটা খুলছে। আর করোনা মোকাবিলায় সরকারের কোনো অর্থপূর্ণ উদ্যোগ দেখছি না। সরকারের বাইরে এনজিও আছে বা বেসরকারি সংস্থা আছে সকলে মিলে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে সম্মিলিতভাবে কাজ করা দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।